বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : মাতৃভূমির পবিত্র মাটিতে বঙ্গবন্ধু – এইচ. টি. ইমাম

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে পাকিস্তানের এয়ার মার্শাল জাফর চৌধুরী লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ছ’টায় পৌছেন। বাংলাদেশ কনস্যুলেটর তদানীন্তন বাঙালি কর্মকর্তা উপপ্রতিনিধি রেজাউল করিম বঙ্গবন্ধুকে প্রথম সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে বহনের জন্য প্রস্তুত থাকা ব্রিটিশ সরকারের গাড়ি ছেড়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বাঙালি কর্মকর্তা রেজাউল করিম চালিত তার ব্যক্তিগত গাড়িতে ব্রিটিশ সরকারের আতিথ্য গ্রহণ করতে ক্ল্যারিজেস হোটেলে গিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : মাতৃভূমির পবিত্র মাটিতে বঙ্গবন্ধু – এইচ. টি. ইমাম, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman
Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman

এক দিনের অবস্থানে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্থ হীথ, বিরোধী দলনেতা হ্যারল্ড উইলসন এবং পার্লামেন্টের বেশ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্যের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাতের আগে রেজাউল করিমের কাছে থেকে বঙ্গবন্ধু সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত হন। লন্ডনে বঙ্গবন্ধু সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছিলেন। যুক্তরাজ্যের সব গণমাধ্যমই গভীর আগ্রহভরে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান প্রত্যক্ষ করে এবং বক্তব্য শোনে। চার শতাধিক সাংবাদিকের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী সব দেশ ও জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বঙ্গবন্ধু ৯ জানুয়ারি (১৯৭২) সকালে লন্ডন থেকে ঢাকার পথে রওনা দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আরএএফ (Royal Air Force) কমেট বিমানে। দিল্লি পালাম বিমানবন্দরে ১০ জানুয়ারি সকালে বিমানটি অবতরণ করে। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি. ভি. গিরির সঙ্গে সৌজন্য কথাবার্তার পর বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানেই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আসেন। এর আগে বঙ্গবন্ধুকে ঢাকায় বহন করে আনার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের একটি বিমান প্রস্তুত করে রেখেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বিনয়ের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এ সম্বন্ধে বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত অধ্যাপক শামসুল হুদা হারুন লিখেছেন :

On the morrow of his release from Pakistan dungeon, the Sheikh while staying in the Hotel Claridges at London politely turned down an offer of Indian aircraft which was ready to fly him back to Bangladesh. Instead, he availed himself of British aircraft for his transport. Needless to add, that the Sheikh landed at the Palam Airport to show his gratitude to the Indian leaders before he flew to his country straightway.**

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে নিজ বাসভূমে প্রত্যাবর্তন করলেন। লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে তাকে বহনকারী ব্রিটিশ কমেট বিমানটি তেজগাঁও বিমানবন্দর স্পর্শ করে বেলা পৌনে ২টায়। একুশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে লাখো মানুষ আনন্দোল্লাস করতে করতে রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বরণ করে নেয় তার স্বদেশভূমিতে। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পৌছুলেন বাঙালি জাতির নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

Sheikh Mujibur Rahman, the Prime Minster of Bangladesh, affixes his signature to the Constitution on November 1974
Sheikh Mujibur Rahman, the Prime Minster of Bangladesh, affixes his signature to the Constitution on November 1974

বঙ্গবন্ধু আবেগমন্দ্রিত কণ্ঠে সমবেত লাখো জনতাকে শোনালেন বাঙালি জাতির বীরত্বগাথা। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা দিলেন তিনি তার আবেগাপ্লুত ভাষায়। বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কাজকেই তিনি সমধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে তার ভাষণে উল্লেখ করলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সম্মিলিত উদ্যোগে সোনার বাংলা রূপে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। শোষণমুক্ত সমাজ গঠনেরও প্রত্যয় ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোনো ধর্মভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।’

রেসকোর্স ময়দান থেকে এবার বঙ্গবন্ধুর ফেরার পালা তার অত্যন্ত আপনজন পরিবারবর্গের সদস্যদের কাছে। শত্রুমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে তার পরিবারবর্গের সদস্যগণ প্রথম একান্ত পরিবেশে পেলেন। ঢাকার ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের যে বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যগণ ছিলেন, সেখানে বঙ্গবন্ধুর জনক শেখ লুৎফর রহমান এবং অশীতিপর বৃদ্ধা জননী বেগম সাহেরা খাতুন পৌছেন।

অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ছাড়াও দলীয় নেতৃবৃন্দও বাসভবনে যান। তবে তারা বেশিক্ষণ সেখানে থাকেননি। সন্ধ্যা পৌনে ছ’টার দিকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি সাদা ক্যাডিলাক গাড়ি এই বাসভবনের দ্বারে প্রবেশ করে। গাড়ি থেকে একে একে নেমে এলেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ, প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও হাজী গোলাম মুর্শেদ।

প্রিয় নেতা বারান্দা, বৈঠকখানা অতিক্রম করে অপেক্ষমাণ প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিত হলেন। তারপরই ভেসে আসে মিলিত আনন্দ, বেদনাবিধুর কান্নার রোল। এভাবেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পরিবার-পরিজনদের সাথে সুদীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর মিলিত হলেন।

বঙ্গবন্ধু আগে বহুবার গ্রেফতার হয়েছেন, জেলে গিয়েছেন, ছাড়া পেয়ে ঘরে ফিরেছেন, কিন্তু নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি রূপে বঙ্গবন্ধুর এই ফিরে আসা ছিল সম্পূর্ণ এক ভিন্ন চিত্র। এই দীর্ঘ নয় মাস বঙ্গবন্ধু ছিলেন শত্রুদেশ পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী।

স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত জাতির জীবনে এক তাৎপর্যময় ঘটনা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতের প্রথম দিকে স্বাধীনতা বার্তা দিকে দিকে প্রেরণের ব্যবস্থা করার পর রাত দেড়টার দিকে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের তিন দিন পর ২৯ মার্চ তাকে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে বন্দী করে রাখা হয়। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসের প্রতিটি প্রহর তিনি মৃত্যুর ক্ষণ গণনা করেছেন।

সামরিক আদালতে প্রহসনমূলক বিচারানুষ্ঠান করে বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদানও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নিয়তি বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখলেও সমগ্র পৃথিবীর প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক মানুষজনের প্রচণ্ড জনমতের চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি না দিয়ে উপায় ছিল না পাকিস্তানি শাসকদের। বঙ্গবন্ধুর সমগ্র কারাজীবনের এই নয় মাসের বন্দিজীবন সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির ছিল। তার মুক্তির দাবি আন্তর্জাতিকতার মর্যাদা লাভ করেছিল। কারাভ্যন্তরে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বন্দিজীবন কেটেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ বাংলাদেশে।প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা

কারা অভ্যন্তরে এবং বাইরে পূর্ববঙ্গের মানুষের সঙ্গেই জেল খেটেছিলেন। তিনি দেশের মাটিতে দেশের আলো-বাতাসের মধ্যে থেকেই জেলজীবন যাপন করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭১ সালে ৯ মাসেরও বেশি সময় তিনি বন্দী ছিলেন শত্রুদেশ পাকিস্তানের পাঞ্জাবের লায়ালপুর, মিয়ানওয়ালি প্রভৃতি স্থানের কারাগারের নির্জন সেলে। প্রতিকূল পরিবেশ, বৈরী মনোভাবাপন্ন মানুষ, চরম আবহাওয়ায় নির্জন বন্দীজীবন যাপনের পর লন্ডন, দিল্লি হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন প্রকৃত অর্থেই এক ঐতিহাসিক ঘটনা। প্রথমে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তারপর পরিবার-পরিজনের মাঝে ফিরে আসা ছিল ১৯৪৮-৭০ সালের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বন্দীশিবির থেকে ফেরার তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র।

শত্রুদেশ পাকিস্তানের নির্জন কারাপ্রকোষ্ঠ থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এলেন বিজয়ী বীরের বেশে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সংবাদ পৃথিবীর গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে প্রচার ও প্রকাশ করে। এসব গণমাধ্যমের মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে প্রকাশিত সানডে মেইল, লন্ডনের সংবাদ সংস্থা এপি, রয়টার ডেসপ্যাচ, জাম্বিয়া থেকে প্রকাশিত দ্য সানডে টাইমস অব জাম্বিয়া, জাম্বিয়া ডেইলি মেইল, নয়াদিল্লির ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, লন্ডনের সানডে টাইমস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, নয়াদিল্লির দ্য স্টেটসম্যান, লন্ডনের দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখ্য।

নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে ভারতের প্রেসিডেন্ট ভিভি গিরির স্বাগতভাষণ, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর স্বাগতভাষণ এবং তাদের ভাষণের জবাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ, নয়াদিল্লির জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ইত্যাদিও তৎকালে সমগ্র পৃথিবীর গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। পরবর্তীকালে এসব ঐতিহাসিক ঘটনা ও ভাষণ গ্রন্থাকারে অগণিত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত তথ্যসংবলিত সংবাদ ও গ্রন্থ ব্যাপক হারে লিখিত ও প্রকাশিত হয়েছে।

বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণাকারী এবং স্থপতি হিসেবে বিশ্বের অসংখ্য রাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই জেনেছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দিত করেন।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিমানবন্দরে যখন ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনীর কমেট জেট বিমান থেকে অবতরণ করছিলেন, তখন লাখ লাখ বাঙালি তাকে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে বিজয়সূচক স্বাগত জানায়। জনতা “জয় বাংলা” ধ্বনিতে চার দিক মুখরিত করে তোলে। বিমানবন্দরে উপস্থিত কূটনীতিকবৃন্দের মধ্যে মার্কিন কনসাল জেনারেল হার্বার্ট ডি স্পিভাক বাঙালি নেতাকে ঈষৎ অবনত হয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সম্মানসূচক করমর্দন করেছিলেন। এই কূটনীতিক সৌজন্য প্রকাশ করে করমর্দনের সময় বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, “ঢাকায় স্বাগতম।” বঙ্গবন্ধুও উত্তরে বলেন, “আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।”

 

রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি তাঁর অনুসারীদের আনুগত্য এতটাই গভীর ও প্রশ্নাতীত ছিল যে, মুক্তিযুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা যা ২২ ডিসেম্বর (১৯৭১) পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতার অস্থায়ী কার্যালয় থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ফিরে আসে, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মন্ত্রিসভার সামনে সেই সময়ে যেসব প্রশ্ন দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম ছিল, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী গেরিলা যোদ্ধাদের কিভাবে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে এবং দেশের অভ্যন্তরে থাকা কুড়ি লাখ অবাঙালিকে কিভাবে রক্ষা করা যাবে।

এ ছাড়া ছিল, বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে নীতিনির্ধারণ, দেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে পুনর্গঠন এবং এ জন্য বিপুল বৈদেশিক সাহায্য সহায়তা লাভের ব্যবস্থা ইত্যাদি। বাংলাদেশ সরকার তৎকালে হিসাব করে দেখেছিল, স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ পুনর্গঠনে কমপক্ষে ৩ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।[১৩]

স্বদেশে ফিরে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরদিনই (১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি) মন্ত্রিসভার সঙ্গে দু’দফা বৈঠক করেন। এর মধ্যেই বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ বৈঠকগুলোতেই বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম এবং ড. কামাল হোসেনের ওপর শাসনতান্ত্রিক অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব পড়ে। অধ্যাদেশের খসড়া প্রণেতাগণ ভাবনাচিন্তা করে স্বাধীনতার সনদে উল্লিখিত রাষ্ট্রপতি সম্পর্কিত অনুচ্ছেদে একটি বাক্য ‘The president shall act on the advice of the Prime Minister’ (প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন) যোগ করে দেন। [১৪]

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : মাতৃভূমির পবিত্র মাটিতে বঙ্গবন্ধু – এইচ. টি. ইমাম
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : মাতৃভূমির পবিত্র মাটিতে বঙ্গবন্ধু – এইচ. টি. ইমাম

লেখক:

এইচ. টি. ইমাম

বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১-১৯৫৭ বই এর তৃতিয় অধ্যায় [পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ] থেকে উধৃত

আরও পড়ুন:

 

রেফারেন্স:

১২। অধ্যাপক শামসুল হুদা হারুন, বাংলাদেশ ভোটিং বিহেভিয়ার, ১৯৮৬, পৃ. ১৮০।

১৩। ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারির দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা দ্রষ্টব্য।

১৪। ড. কামাল হোসেনের স্মৃতিচারণ থেকে উদ্ধৃত।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে আরও পড়ুন:

Leave a Comment