স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি একটি কার্যকর অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলাই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পূর্ণগঠন, প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস, কৃষি ও শিল্প পুনরুজ্জীবন, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব হ্রাস এবং বৈদেশিক সাহায্যের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের ব্যয় এবং রাজস্ব সংগ্রহ পরিকল্পিতভাবে পরিচালনার প্রয়োজন ছিল। আর এসব লক্ষ্য অর্জনের পথে প্রধান নিয়ামক ছিল জাতীয় বাজেট ও করনীতি।
বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়—এটি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক দর্শন, আর্থ-সামাজিক অগ্রাধিকার এবং উন্নয়ন কৌশলের প্রতিফলন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত সরকার এই বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে জনমুখী, পুনর্গঠনভিত্তিক ও পরিকল্পিত রূপে উপস্থাপন করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময়কালে বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে মোট চারটি বাজেট ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে প্রথম তিনটি বাজেট উপস্থাপন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, আর চতুর্থ বাজেটটি পেশ করেন ড. আজিজুর রহমান মল্লিক।
Table of Contents
বঙ্গবন্ধুর সরকার – বাজেট প্রণয়ন ও কর নির্ধারণ
বাজেট বাস্তবায়ন ও কর নীতিতে স্বচ্ছতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি
বঙ্গবন্ধু সরকারের শাসনকাল (১৯৭২–১৯৭৫) স্বল্প সময়ের হলেও অর্থনৈতিক খাতে তাদের ভূমিকা ছিল দূরদর্শী, বাস্তবভিত্তিক এবং সর্বোপরি জনকল্যাণমূলক। যদিও এ সময় চারটি বাজেট উপস্থাপন করা হয়, বাস্তবে তিনটি বাজেট কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছিল। এসব বাজেট বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ অত্যন্ত সততা, দক্ষতা এবং পরিকল্পনামাফিক তৈরি করেছিলেন। বাজেটগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল স্বচ্ছতা—দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যাই হোক না কেন, তা অত্যন্ত খোলামেলা ও বাস্তবভিত্তিকভাবে জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছিল। এ দৃষ্টিভঙ্গি বঙ্গবন্ধু পরবর্তী অনেক সরকারের বাজেট বিবরণে অনুপস্থিত ছিল।
উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৩ সালের ১৪ জুন পেশকৃত ১৯৭৩–৭৪ অর্থবছরের বাজেটে মাননীয় অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ জাতিকে অত্যন্ত স্পষ্টভাষায় মূল্যস্ফীতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন:
“গত এক বছরে সকল দ্রব্যের তীব্র মূল্য বৃদ্ধি দেশের প্রতিটি মানুষকেই স্পর্শ করেছে। কেন এরকম মূল্যবৃদ্ধি হলো এবং মূল্যবৃদ্ধি রোধ করার জন্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, তা খুঁটিয়ে দেখা দরকার। কিন্তু সেই সঙ্গে গত এক বছরে দেশকে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তার বাস্তবানুগ বিশ্লেষণ করা অপরিহার্য।”
এই বক্তব্যে দেশের অর্থনৈতিক সংকটকে গোপন না করে, বরং বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাধান খোঁজার আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল সুস্পষ্ট। তুলনামূলকভাবে ২০০২–০৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতার ২ নম্বর অনুচ্ছেদে তখনকার সরকার রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পূর্ববর্তী সরকারকে দায়ী করে বলেন:
“জাতীয়তাবাদী ধ্যান-ধারণায় পরিচালিত আমাদের সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশ ও জনগণের সার্বিক কল্যাণ সাধন। … কিন্তু বিগত আওয়ামী শাসনামলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনুসৃত পশ্চাদমুখী নীতি ও অদূরদর্শিতার জন্য ‘Emerging Tiger’-এর ইমেজ সম্পূর্ণরূপে স্নান হয়ে যায়।”
এই তুলনা থেকে সহজেই বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধু সরকারের বাজেটগুলো তথ্যসমৃদ্ধ ও নীতিনির্ধারক ছিল, যেখানে রাজনৈতিক কটাক্ষের পরিবর্তে সমস্যা ও সমাধানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
গরিববান্ধব করনীতি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা
বঙ্গবন্ধুর বাজেট পরিকল্পনায় দরিদ্র জনগণের কল্যাণ ছিল সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের চরম আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও তিনি দারিদ্র্যপীড়িত জনগণকে স্বস্তি দেওয়ার লক্ষ্যে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন—
সকল প্রকার সুতি বস্ত্রের উপর শতকরা ৫০% আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হয়, যদিও এতে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল (প্রায় ৭০ কোটি টাকা)।
২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করে দরিদ্র কৃষক শ্রেণিকে স্বস্তি দেওয়া হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল—নতুন করে গরিব মানুষের ওপর কোনও কর চাপানো হয়নি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী যে, পরোক্ষ করের ভার শেষ পর্যন্ত গরিব জনগণের ঘাড়ে গিয়ে পড়ে। সে বিবেচনায় তিনি কর নীতিতে ছিলেন অত্যন্ত মানবিক ও সতর্ক।
এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি, জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনের দ্বিতীয় বৈঠকে বঙ্গবন্ধু বলেন:
“…কাজ করে Production বাড়াও, নিশ্চয়ই তোমরা তার অংশ পাবে। কাজ করবে না, আর পয়সা নেবে—তা হবে না। কার পয়সা নেবে? গরিবের পয়সা নেবে? গরিবের উপর ট্যাক্স বসাব? খাবার আছে তার? কাপড় আছে তার? তার উপর ট্যাক্স বসাব কোত্থেকে? আমি পারব না। তোমাদের কাজ করে Production করে পয়সা নিতে হবে।”
এই বক্তব্য বঙ্গবন্ধুর কর নীতির নৈতিক দৃঢ়তা ও দরিদ্রবান্ধব অবস্থানকে তুলে ধরে।
বঙ্গবন্ধুর করনীতি বনাম পরবর্তী সরকারের রাজস্ব কাঠামো: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ
বঙ্গবন্ধু সরকারের সময়কালীন বাজেটগুলো ছিল জনমুখী ও গরিববান্ধব, যার অন্যতম দৃষ্টান্ত রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৪–৭৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের মাত্র ৬৫% সংগ্রহ করা হয়েছিল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের মাধ্যমে, আর বাকি ৩৫% এসেছিল অন্যান্য উৎস থেকে। অথচ ১৯৭৫-পরবর্তী প্রায় প্রতিটি বাজেটে রাজস্ব আয়ের ৮০%-এর অধিক কর নির্ভর ছিল, যার বড় একটি অংশ এসেছিল পরোক্ষ করের মাধ্যমে — যা সরাসরি গরিব মানুষের জীবনে চাপ সৃষ্টি করে।
বঙ্গবন্ধুর সরকারের করনীতির মূল লক্ষ্য ছিল—রাষ্ট্রের পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা হলেও তা যেন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর ভার না চাপায়। এজন্য তিনি করের পরিধি নির্ধারণে ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ। সস্ত্রাসহ এবং জোরপূর্বক রাজস্ব আহরণ নয়, বরং সমাজের সামর্থ্যবান শ্রেণিকে উপযুক্ত হারে কর প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে সচল রাখার নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
পরবর্তী বাজেটগুলোর বাস্তবতা: করভারে জনজীবন
তুলনামূলকভাবে ১৯৮০–৮১ অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন পণ্যের ওপর অযৌক্তিক হারে কর আরোপ করা হয়েছিল। যেমন:
এক ব্যান্ডের রেডিওর উপর শুল্ক ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়।
কিন্তু পরবর্তী বছর (১৯৮১–৮২) রঙিন টিভির শুল্ক হার কমানো হয় উচ্চবিত্ত শ্রেণির সুবিধার্থে — ১৯ ইঞ্চির নিচের সেটে ৪,৫০০ টাকা থেকে ৩,০০০ টাকা এবং বড় সেটে ৩,০০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা করা হয়।
এই দ্বৈত নীতি গরিব ও ধনী শ্রেণির প্রতি ভিন্ন মানদণ্ড প্রতিপন্ন করে, যেখানে নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওপর বোঝা বাড়ানো হয়েছে, অথচ ধনীদের ক্ষেত্রে তা হ্রাস করা হয়েছে।
কর কাঠামোয় বৈষম্য: ২০০৬–০৭ সালের বাজেট
২০০৬–০৭ অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—
ব্যক্তি করদাতার করসীমা অপরিবর্তিত রেখে মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে প্রকৃত আয় কমে যাওয়া সত্ত্বেও আগের হারে কর আদায়ের চেষ্টা করা হয়।
ন্যূনতম করের পরিমাণ অপরিবর্তিত রাখা হয় ১,৮০০ টাকা, যা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
পরোক্ষ কর (ভ্যাট) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৯% বৃদ্ধি করে ধরা হয়, যা অবশেষে পণ্যের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে ভোক্তার ঘাড়ে এসে পড়ে।
এছাড়াও ছোট কোম্পানির আয় থাক বা না থাক, ন্যূনতম ৫,০০০ টাকা বা বিক্রয়ের ০.৫% কর আরোপের বিধান রাখা হয়, যা আয়কর আইনের পরিপন্থী।
বঙ্গবন্ধুর বৈদেশিক ঋণ বিষয়ে অবস্থান
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের মতো প্রাথমিক প্রয়োজন মেটাতে যেখানে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থের তীব্র ঘাটতি ছিল, সেখানে বঙ্গবন্ধু ব্যাপক পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের কাজ পরিচালনা করেন। এই অবস্থাতেও তিনি বৈদেশিক ঋণের উপর অতিনির্ভরশীলতা পরিহার করেন।
তার দৃষ্টিতে, বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তি নানা শর্তসাপেক্ষ ও প্রায়শই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হতে পারে। উপরন্তু, বৈদেশিক ঋণে সুদের হারও ছিল অত্যন্ত উচ্চ, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারত।
বৈদেশিক ঋণ, করনীতি ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য: বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গি ও বর্তমান বাস্তবতা
বৈদেশিক ঋণ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী অবস্থান
বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ একটি রাষ্ট্রের জন্য তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক সমাধান হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করতে পারে। সুদসহ ঋণ পরিশোধের দায়ভারে একটি দেশের আর্থিক স্বাধীনতা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়। বঙ্গবন্ধু এই বাস্তবতা অত্যন্ত ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন। ফলে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক সহায়তা গ্রহণ করলেও তিনি কখনো রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বার্থকে বন্ধক রাখার পক্ষপাতী ছিলেন না।
১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ নৌবাহিনী দিবসে চট্টগ্রামে নৌসেনাদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু যে বক্তব্য প্রদান করেন, তা তাঁর এই আদর্শের প্রকৃষ্ট প্রমাণ:
“হ্যাঁ, সত্যিই অনেক প্রয়োজন। সবই তোমরা পাবে। কিন্তু আস্তে আস্তে। আমি বাংলাদেশকে বিক্রি করতে চাই না, মর্টগেজ রাখতে চাই না… আমি নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখে সাহায্য চাই। নিজেকে বিক্রি করে বা মর্টগেজ দিয়ে চাই না।”
এই নীতির বাস্তব প্রতিফলন পাওয়া যায় ১৯৭২–৭৫ সময়কালের বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনায়। এই সময়কালে:
প্রতিশ্রুত ঋণ: ১৮৬.২০ কোটি মার্কিন ডলার
ব্যয়িত ঋণ: ৮৬.০ কোটি মার্কিন ডলার
ব্যবহৃত ঋণের হার: মাত্র ৪৬.১৯%
অপরদিকে, ১৯৭৫-পরবর্তী ৩৩ বছরে:
প্রতিশ্রুত ঋণ: ৩২২০.১ কোটি মার্কিন ডলার
ব্যয়িত ঋণ: ২৬৩৭.১ কোটি মার্কিন ডলার
ব্যবহৃত ঋণের হার: প্রায় ৮২%
অর্থাৎ, বঙ্গবন্ধু সরকার আন্তর্জাতিক সাহায্য গ্রহণ করলেও তার ব্যবহার ছিল সীমিত ও দায়িত্বপূর্ণ।
ঋণের ভার এবং অর্থনৈতিক বোঝা
১৯৭৪–৭৫ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের দায় ছিল ৮৬৫ কোটি টাকা, যা ছিল দেশের জিডিপির ১৭%। আর ২০০৪ সালে সেই ঋণ দাঁড়ায় ৯৭,৬২০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩২.৫%। এই ঋণের সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে ২০০৭–০৮ সাল থেকে শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়ার রেওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, সুদ পরিশোধের পরিমাণ শিক্ষা বাজেটকে ছাপিয়ে যায়। এ থেকেই বোঝা যায়, অপ্রয়োজনীয় ঋণ দেশের মৌলিক সেবা খাতগুলোকে কীভাবে বাধাগ্রস্ত করে।
পরোক্ষ কর: গরিবের উপর চাপ
১৯৭২ সাল থেকে রাজস্ব বাজেটে সবচেয়ে বড় উৎস পরোক্ষ কর হলেও বঙ্গবন্ধু সরকার এই কর আরোপে ছিলেন অত্যন্ত সংযত। কারণ, পরোক্ষ করের প্রকৃতি এমন যে এর বোঝা সমাজের সকল স্তরের মানুষকেই বহন করতে হয় — ধনী ও গরিব উভয়কেই সমানভাবে। তবে গরিব মানুষের উপর এর প্রভাব হয় মারাত্মক।
১৯৭৪–৭৫ সালে পরোক্ষ করের হার ছিল জিডিপির ৬.৭৫%
২০০৬–০৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০.৫৩%
➡️ বৃদ্ধি হার প্রায় ৫৬%, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রকৃত আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রবৃদ্ধির হার বনাম দারিদ্র্য হ্রাস
২০০০–২০০৫ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ৫.৪৪%। কিন্তু জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, এই সময়কালে দারিদ্র্য হ্রাস পায় মাত্র ০.৫% হারে। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে, উচ্চ প্রবৃদ্ধির সুফল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায়নি; বরং তা কেবল বিত্তশালী শ্রেণির মধ্যেই কেন্দ্রীভূত হয়েছে।
মাথাপিছু আয় ও বাস্তব আয়ের বিভাজন
১৯৭৩–৭৪ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৬৫২ টাকা (~৮২ USD)
২০০৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯,৯৮৬ টাকা (~৪৫৬ USD)
➡️ কিন্তু সরকারের নিজস্ব প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে—দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হারে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়েনি। ফলে বাস্তব আয় হ্রাস পেয়েছে, জীবনযাত্রার মানও কমে গেছে।