৪ঠা ফেব্রুয়ারী ১৯৭৪ – যুবলীগের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ: আমি জানি হে বাংলার দুশমন, হঁসিয়ার ইসিয়ার। হে- সত্যিই হ্সিয়ার হতে হবে ওদের । না হয়ে উপায় নাই। আর হুকুম না করলে আর মারিস না। আমি যে প্রধানমন্ত্রী- মাঝে মধ্যে ভুলে যাই। আর যা-ই হউক, আমি জানি অনেক ঝগড়া করেও তোমাদের অনেক অসুবিধা ভোগ করতে হয় এবং নিজেদের মধ্যে মিল না থাকার জন্য জায়গায় জায়গায় এ ওমক দিকদা ব্যবহার করে ও ওমক দিকদা ব্যবহার করে। সেইজন্য আমি আওয়ামীলীগদের প্রেসিডিয়াম এবং অন্য সদস্যদের বলে দিয়েছি যে, এই সেন্ট্রালের কো-অডিনেশন কমিটি হবে।
৪ঠা ফেব্রুয়ারী ১৯৭৪ যুবলীগের প্রথম জাতীয় করসে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
এমন কো- অডিনেশন করতে হবে, যাতে কোন রকমে …….. এদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পারে এবং কেউ তোমাদের উপর অত্যাচার করতে না পারে_ সেইদিকে আমি খেয়াল রাখার চেষ্টা করব। তোমাদের কাছে আমার আবেদন রইল যে, আমার নীতি কয়টা মনে আছে? চারটা নীতি। এই নীতি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। দূর্ণীতি, ঘুষ, শোষকের বিরুদ্ধে সংথ্রাম করতে হবে, রাজী আছো? যারা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না, রাতে বিশৃংখলার সৃষ্টি করে, অন্ধকারে মানুষকে হত্যা করে, চুরি-ডাকাতি করে_ তাদের দমন করতে হবে । রাজি আছো? কোনদিন কোন সরকার, পুলিশ বা কর্মচারি দিয়ে শুধু এটা করতে পারে না।
জনগণের সহযোগিতার প্রয়োজন এবং তোমরা জনমত সৃষ্টি কর, থামে গ্রামে জনমত সৃষ্টি কর দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে। বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ ঘুমাতে চায়, বাংলার মানুষ শান্তি চায়। তোমরা যারা আমার কথায় অস্ত্র ধরেছিলা, যখন যুদ্ধ করেছ। আজ আমার সৌভাগ্য, তোমরা অনেকেই বেঁচে আছ। এমনও হতে পারত, তোমরা বেঁচে আসতে না, আমিও বেঁচে আসতাম না। আজ তোমাদের পেয়েছি আমি, আজ দু’এক বৎসরের মধ্যে তোমরা… হয়েছো আবার ৷ আমি জানতে চাই এর বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে তোমাদের গণ- আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। দুর্ণীতির বিরুদ্ধে, স্মাগলিংয়ের বিরুদ্ধে, শোষকের বিরুদ্ধে, তারপরে যারা এই যে, কি করে এই যে মিশাল দেয়, মিশাল দিয়া মানুষকে বিষ খাওয়ায় ।
ভেজালের বিরুদ্ধে, যারা বিদেশে পয়সা রাখে_তার বিরুদ্ধে, যারা বিদেশী এজেন্ট হয়, বড় বড় সুট পইরা, দু’এক গ্রাস মদ খাইয়া, রাত্রে বিদেশীদের এজেন্ট হয়। এ এজেন্টগুলো পয়সা পায়। সেই পয়সা নিয়া এইখানে বিশৃংখলার চেষ্টা করে। এরা কিন্তু এ আমাদের জাত- এঁ কৃষক, মজুর, গরীব-দুঃখীদের জাত। এই ভদ্দর লোক জাত আমরা । ভালো স্যর্ট, ভালো নেকটাই আর খচ খচ মদ আর টাকা রাত্রের বেলায় ছিটায় ফটাফট। আর চারটি আদর্শ- জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা ।
এই যে, যারা এই বাংলার মাটিতে কারো লগে ষড়যন্ত্র করতে চায়, তাদেরকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে_ মনে রেখ। এখনও মাঝে মধ্যে তারা করে। তারা আমার বাংলার রক্তের বিরুদ্ধে কাজ করে। আমি বারবার বলেছি- বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র । বাংলাদেশের ভিতরের ব্যাপারে, বা বাংলাদেশের ব্যাপারে কোন বিদেশী শক্তি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, যতদিন আমরা বেঁচে আছি। আমরা বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বাস করতে চাই। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কামনা করি, কারো সঙ্গে শত্রুতা কামনা করি না।
কিন্তু কেউ যদি আমার বন্ধৃত্ কামনা না করে, কেউ যদি কোন …… যদি আমার সঙ্গে দুশমনি করে, বিষন্ন নক অনি বাটি জি আমাকে সেইখানে তার পায়ের নিচে যেতে হবে বন্ধুগণ, শেখ মুজিবুর রহমান ফীসিতে ঝুলে মরতে পারে কিন্তু বাংলার মানুষের আত্মসম্মান বিক্রি করতে দিতে পারে না। আমরা বন্ধুত্ব কামনা করি সকলের সঙ্গে কিন্তু কারো মাস্তানি কামনা করি না। সেইজন্য জাতের ইজ্জত থাকে না। বেশি ভিক্ষা আমি করতে চাই না। সেইজন্য তোমাদের দ্বিতীয় কাজ হবে প্রোডাকশন বাড়াও ৷ মাঠে ময়দানে তোমরা যারা গ্রামে গ্রামে আছো, যুবলীগের ছেলেরা আদর্শ দেখাও। এক একটা মহকুমার যুবলীগ কর্মীরা একটা কইরা কৃষি ফার্ম গঠন কর। নিজেরা খেটে দেখাও, কেমন করে প্রোডাকশন হয়।
কৃষক ভাইদের পথ দেখাও । যুবলীগ ভাইরা, তোমাদের মধ্যে শ্রমিক নেতারাও আছে। বাংলাদেশের শ্রমিক ভালো, তারা যেন কঠোর পরিশ্রম করে । জাতীয়করণ মানে ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, এ শ্রমিকদের কারখানা নয়, এ কারখানা সাড়ে সাত কোটি লোকের । এইটা ভুললে চলবে না। প্রোডাকশন শ্রমিকদের দিতে হবে । তোমরা গ্রামের থেকে আসছ না অনেকে, সাব ডিভিশন, সাব মহাকুমা থেকে । তোমরা একটা মহাকুমায় যাও, একটা করে কৃষি ফার্ম . গঠন কর। বাংলার গরীবের বাড়িতে যাও, তাদের কাজ করে দেখাও, তাদের সাহায্য কর।
মানে আগে কাজ কর। খালি বক্তৃতা, খালি পজিশন, খালি জিন্দাবাদ, খালি মুর্দাবাদ, সব বাদ দেও… । তোমরা পারনা কারখানায় খেটে দেখাবার? তোমরা কাজ কর, তোমাদের আমি সাহায্য করব। তোমরা পারনা, বাংলার কৃষকেরে কও যে ভাই, তুমি হাল চাষ করতে পারছ না, তোমাদের আমি সাহায্য করি। নিজে হলেই হবে। তাদের ভালোবাসা পাবা । খেটে খেলে ইজ্জত বাড়বে । আমার ইজ্জত বাড়বে যে, বঙ্গবন্ধুর কথা শুনেছে, যুবকরা গ্রামে গ্রামে আইছে, খাল কাটছে, ইনভেষ্টম্যান্ট করছে, কাদার মধ্যে আইছে, জমিতে কাজ করছে।
এভাবেই উৎপাদন বাড়াতে হবে । ভিক্ষুকের জাতের ইজ্জত নাই। সাড়ে সাত কোটি লোক । যেই কাজ করতে চায়, বোধ হয় আল্লার মর্জিতে অল্পতেই হয়ে যাবে। ৫০ হাজার স্কয়ার মাইল, এগুলির প্রানিং করতে হবে । উপায় নাই । এতো লোকের খাবার দেয়া সোজা কথা নয়। শুধু বাড়ীই হয়ে যাবে, জমি থাকবে না। বাংলা সম্পদ আছে, ভয় নাই। বাংলার সম্পদ আছে, বাংলার সম্পদ বাংলা মানুষ । বাংলার সোনার মাটি । আমার বাংলায় হয় না এমন কোন জিনিস নাই। কিন্তু গঠনমূলকভাবে কাজ করতে হবে ।
আমার কয়লা আছে, করতে পারলে আমার উপকার হবে। আমার পাট, আমার চা আছে। আমি তামাক তৈরি করতে পারি, আমি আঁখ তৈরি করতে পারি, বাংলার মাটিতে হয় না এমন জিনিস নাই । যুব সম্প্রদায়, এ-সব কিছু নিঃশেষ হয়ে গেছে। নতুন করে ইনভেষ্ট লাগবে । সময় লাগবে । মানুষ বাংলার মানুষ ফল ভোগ করতে পারবে দশ বৎসর পরে- এর আগে নয়। তাদের দোষ দিয়ে লাভ নাই। গভমেন্ট প্রোডাক্ট করতে হবে, ভালো লোক আনতে হবে। সিস্টেমকে চালু করতে হবে। সোসালিজম করতে হলে, সোসালিজমের ক্যাডারের প্রয়োজন আছে। তাকে ট্রেনিং নিতে হবে, ক্যাডার ছাড়া হয় না। তোমাদের সোসালিজমের ক্যাডার হতে হবে । সোসালিজমের কর্মী হতে হবে ।
তাহলে এদেশে সোসালিজম হবে, না হলে হবে না। আছো, কর্মীরা আছো, কৃষক-শ্রমিক ভাইয়েরা আছো, ছেলেরা-মেয়েরা আছো- যারা এই যুব প্রতিষ্ঠান গড়েছ এই এক বৎসরের মধ্যে, তোমাদের আদি জ্জ্হা বা নত সেজন্য আরো ধন্যবাদ দেই। আমার নেতৃত্ মানছ না মানছ তাতে আমার কিছু বলার নেই। আমার কথা না শুনলে আমিই থাকবো না, তো আবার নেতৃত্টা কি? সে জন্যই জানিয়ে আমি আমার আসন গ্রহণ করতে চাই। তোমাদের সম্মেলন সুখের হউক- সফল হউক । এই আর্শিবাদ এই কামনাই আমি করি।
যারা তোমাদের অতিথিবৃন্দ আছেন, তোমাদের পক্ষ থেকে, বাংলার জনগণের পক্ষ থেকে আবারও আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই ৷ তবে শ্রমিক ভাইদের কাছে একটা কথা মনে রাখবা, প্রোভাকশনটা…। একথা বলে তোমাদের আবারও ধন্যবাদ দিয়ে আমি বিধায় নিচ্ছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ।
আরও পরুন :
- ১৮ জানুয়ারী ১৯৭৪ ৩য় সালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাওন্সিল অধিবেশনে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধু উদ্বোধনী ভাষণ
- ১৫ই ডিসেম্বর ১৯৭৩ সালের জাতীয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশ্যে বেতার ও টেলিভিশনে ভাষণ
- ২৫ অক্টোবর ১৯৭৩ সালের জাপান থেকে ভ্রমণ শেষে তেজগাঁও বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের সামনে ভাষণ
- ১৭ অক্টোবর ১৯৭৩ সালের ধ্যপ্রাচ্যে গমন উপলক্ষে বাংলাদেশ মেডিকেল দলের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ভাষণ
- ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ সালের ভৈরবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী; সময়রেখা [ Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman ]