[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

বঙ্গবন্ধু সরকার – বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন

বঙ্গবন্ধু সরকারে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন : দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আর একটি উপাদান হচ্ছে বিদ্যুৎ। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে অন্যান্য অবকাঠামোর মতো বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও ছিল সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত।  বিদ্যুতের সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সরকার বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। স্থাপিত উল্লেখযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো হচ্ছে থুলনায় ৬০ মেগাওয়াটের তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুকরণ, ঘোড়াশালে ৫৫ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট স্থাপন, সৈয়দপুরে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং ভেড়ামারায় ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সাথে ঋণচুক্তি সম্পাদন।

বঙ্গবন্ধু সরকার – বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন

১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক স্থাপনকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩০০ মেগাওয়াট এবং বিদ্যুৎ-সঞ্চালন লাইন ছিল ১৫০০ কিলোমিটার। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু সরকারের এই স্থাপনা কতখানি অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিহ্ন ছিল তা অনুধাবন করা যায় যদি পরবর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে অগ্রগতির সাথে তুলনা করা হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা ছিল ৫৪৭ মেগাওয়াট।

সেই অবস্থা থেকে বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৪ ৭৫ অর্থবছর শেষে বিদ্যুতের উৎপাদন-ক্ষমতা নিয়ে আসেন ৬৬৭ মেগাওয়াটে। এতে বিদ্যুতের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির হার গড়ে বছরে দাঁড়ায় ৬.৫%। পক্ষান্তরে ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছর থেকে ২০০৭-০৮ অর্থবছর পর্যন্ত ৩৩ বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়ায় ৫২৬২ মেগাওয়াট। এখানেও প্রতি বছর গড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য স্থাপিত উৎপাদন-ক্ষমতা বৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ৬.৫% ।

সুতরাং বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সরকারগুলো যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রতি বছর গড়ে উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করে সেই একই হারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তা হলো ১৯৭৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মোট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বসানো হয়েছিল ৭৮৪৮ কিলোমিটার। গড়ে প্রতি বছর সঞ্চালন লাইন বসানো হয়েছিল ২৪৫ কিলোমিটার।

অথচ ১৯৭৩ সালেই লাইন বসানো হয়েছিল ১৫০০ কিলোমিটার অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সরকার প্রতি বছর যে পরিমাণ বিদ্যুৎ-সঞ্চালন লাইন বসিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৩ সালে বসিয়েছিলেন তার ৬ গুণ। কৃষিতে সেচ প্রদানে বিদ্যুৎ প্রয়োজন, শিল্প-কারখানা বিদ্যুৎ ছাড়া চালানো মোটেও সম্ভব নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, কুটির শিল্প, বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। বিদ্যুতের এই অপরিহার্য প্রয়োজন অনুভব করে বঙ্গবন্ধু সরকার এর উৎপাদন এবং সঞ্চালনের যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন তা ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ ।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অধিক উৎপাদনের, আর উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন বিদ্যুতের। দেশে প্রয়োজন মাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বঙ্গবন্ধু কতটুকু চেষ্টা করেছেন তা একটি ঘটনার বিবরণ দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু খবর পেলেন ঠাকুরগাঁয়ে একটি কোল্ড স্টোরেজ করা হয়েছে। কিন্তু পাওয়ার নেই খবর নিয়ে জানলেন পাওয়ার সেখানে যেতে এক বছর সময় লাগবে কারণ খাম্বা নেই । খাম্বা বিদেশ থেকে আনতে হবে।

বঙ্গবন্ধু মিনিস্টার সাহেবকে বললেন খাম্বা-টাম্বা বুঝি না, বাঁশ তো আছে। তিনি বাঁশ দিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ দিতে বললেন এবং সেই অনুযায়ী বিদ্যুৎ লাগিয়ে দেওয়া হলো। যেখানে এক বছরের আগে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব ছিল না, বঙ্গবন্ধুর সরাসরি হস্তক্ষেপে তা অল্প সময়ের মধ্যেই সমাধান হয়ে গেল।

একটি প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর এই আন্তরিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি যদি ইদানীং কালের সিদ্ধিরগঞ্জ ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দশ বছর সময় লেগে যাওয়ার তুলনা করা হয় তাহলেই বোঝা সম্ভব বঙ্গবন্ধু সরকার দেশের উন্নয়নে কীভাবে কাজ করেছেন। শুধু সিদ্ধিরগঞ্জ ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিলম্বই নয় দেশের প্রতিটি বিদ্যমান বিদ্যুৎকেন্দ্র কতটা নাজুক তা গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৩ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে উপস্থাপন করা হলো :

উপরের তালিকা থেকে দেখা যায় দেশের পিডিবির ১৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮৫টি ইউনিটের মধ্যে ৩৬টির বয়স ১৬ থেকে ৪১ বছর। সাধারণত একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৫ বছর চলার পর তার কার্যক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে সেগুলি চালানো হচ্ছে।

বিদ্যুতের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতার তথ্য, বর্তমান অবস্থা, সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ ইত্যাদি পর্যালোচনা করলে যে বিষয়টি স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায় তা হলো— যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত একটি দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করার জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিতরণের জন্য যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এবং অগ্রগতি লাভ করেছিলেন তা ১৯৭৫ পরবর্তী যেকোনো সরকারের চেয়ে অগ্রগামী।

Leave a Comment