৬ নভেম্বর ১৯৭৪ । কায়রোতে ভোজ সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ভাষণ

৬ নভেম্বর ১৯৭৪ । কায়রোতে ভোজ সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ভাষণ

৬ নভেম্বর ১৯৭৪ সালের কায়রোতে ভোজ সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ভাষণঃ মি. ভাইস প্রেসিডেন্ট, জব্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ- আজ এই এঁতিহাসিক কায়রোতে, মিশরীয় ও আরব দেশের ভ্রাতৃতৃপূর্ণ জনসাধারণের মাঝে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত। মিশরের জনগণ ও নেতৃবৃন্দ আমাকে ও আমার ভ্রমনকালের সদস্যদের যে সাদর হুদ্যতাপূর্ণ সম্ভাষণ জানিয়েছেন_তাতে আমরা অভিভূত । মিশরের জনসাধারণের মাঝে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত।

 

১৮ আগষ্ট ১৯৭৪ সালের দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
১৮ আগষ্ট ১৯৭৪ সালের দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ

 

৬ নভেম্বর ১৯৭৪ সালের কায়রোতে ভোজ সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ভাষণ

মিশরের জনগণ ও নেতৃবৃন্দ আমাকে ও আমার ভ্রমনকালের সদস্যদের যে সাদর হদ্যতাপূর্ণ অভিবাদন জানিয়েছেন তাতে আমি অভিভূত । আমার বাংলাদেশের জনসাধারণ সম্পর্কে আপনার ভ্রাতৃসুলভ অভিবাসনের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আজকে এই বিশেষ মুহুর্তে, স্বকৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার, বাংলাদেশের সদস্যপদ পাওয়ার ব্যাপারে মিশরের সরকার ও জনগণের সক্রিয় সমর্থনের কথা। সম্প্রতি সর্বনাশা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশের মানুষের প্রতি, আপনাদের সাহায্য আমাদের মানসপটে উজ্জল হয়ে রয়েছে।

মিশর ও বাংলাদেশ একই এতিহ্যবাহী সাংস্কৃতি, এতিহাসিক ও ধমীয়ি বন্ধনে আবদ্ধ। সমাজতন্ত্রে ও জোট নিরপেক্ষতার অভিন্ন আদর্শের প্রতি নিশ্ই আমাদের দুই দেশকে করেছে নিকটতর। আমাদের উভয় দেশের জনসাধারণকে আপন ভাগ্যে নিয়োজিত হওয়ার জন্য ওপনিবেশিক ও অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে করতে হয়েছে দীর্ঘ এক কঠোর সংগ্রাম ।

আমাদের দুটি দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে গভীর নৈকট্যতা, নৈকট্য গড়ে থাকা একান্তই স্বাভাবিক । জোট নিরপেক্ষতার প্রতি আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য ।একদল মানুষের উপর অন্য একদল রাজনীতিক ও অর্থনীতিক আভিজাত্য অবসানের লক্ষ্যে ।

সুযোগ দিচ্ছে সকল মানুষ স্বীয় সম্তাব্যযুগান্তর নিকটতর সম্মান ও মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারে। একমাত্র তখন ন্যায় বিচার দেশের উপর প্রতিষ্ঠিত, শান্তিও প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের উপমহাদেশের তথা সারা বিশ্বের শান্তি সম্প্রসারণে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। – আমাদের উপমহাদেশের সম্পর্কে, স্বাভাবিকরণের প্রশ্নে আপনি বন্ধু ও শোভনপূর্ণ আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরা তার প্রশংসা করি। উপমহাদেশের বর্তমান সমস্যাবলি নিষ্পত্তির প্রশ্রে আমরা স্বাভাবিক অবদান রেখেছি ও স্বাভাবিকরণের স্থায়ী শাস্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা অক্ষুন্ন রয়েছে।

মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আমাদের সঙ্গে সকল এতিহ্য ও বন্ধুর বন্ধনে, সকল আরব দেশের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুসুলভ ও ভ্রাতৃতুসুলভ সম্পর্ক আরো জোরদার করার উপর বাংলাদেশেরও জনসাধারণ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। প্রতিটি আরব সভ্যকে আমরা নিজেদের সভ্য বলে মনে করে থাকি। আরব ভাইদের সাথে আমার গভীর সম্পর্কের প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে অক্টোবরের যুদ্ধের সময়। সেদিন বাংলাদেশের জনসাধারণ আরব ভাইদের সমর্থনে সশস্ত্রভাবে এগিয়ে এসেছিল ।

৬ নভেম্বর ১৯৭৪ । কায়রোতে ভোজ সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ভাষণ
৬ নভেম্বর ১৯৭৪ । কায়রোতে ভোজ সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ভাষণ

মি. ভাইস প্রেসিডেন্ট, অক্টোবরের যুদ্ধে মিশরের জনগণ, আপনাদের প্রেসিডেন্ট সাহেবের নেতৃত্বে, ইসরাইলের রুদ্ধতার কল্পকথার চিরকালের শ্রদ্ধা করতে চাই। সে সাহসিকতা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে যা কিছু বিজয় করে আরব জাহানের আশা সম্পূর্ণ নতুন করে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে তা এক বিরল দৃষ্টান্ত । মি. ভাইস প্রেসিডেন্ট, আপনাকে এ আশ্বাসও দিতে পারি যে, ইসরাইলের আথাসন এ সংগঠনের বিরুদ্ধে, আমাদের পিতৃ ভাইদের জন্য জাতীয় মর্যাদা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠায়, আপনাদের ন্যায্য সংখামে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কেটি মানুষ চিরদিন আপনাদের পাশে দীড়াবে।

আমরা বিশ্বাস করি, সত্য ও ন্যায় আপনাদের পক্ষে বিজয় আপনাদের অবধারিত। এশিয়ায়, আফ্রিকায়, দক্ষিণ আফ্রিকায়, আত্মনিয়ন্ত্রণ, জাতীয় স্বাধীনতার জন্য সংথামেরও মানুষের প্রতি আমাদের স্বাভাবিক সমর্থনের কথা আজও এখানে আবারও আমি ঘোষণা করতে চাই । ১৩৬ স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত দুনিযায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। দুঃখের বিষয় আমাদের যুদ্ধ-বিধবস্ত অর্থনীতির গনি ও উন্নয়ন প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত হয়েছে। অবস্থার আরও করেছে এ বছরের প্রলয়কারী বন্যা।

বাংলাদেশের জনসাধারণ সাহস ও ধৈর্ধ্যের সাথে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে। আমরা সুনিশ্চিত, বন্ধুদের সহায়তা ও শুভেচ্ছায় আমরা এ সংকটের উত্তরণের ব্যবস্থা করতে পারব। আমাদের জনগণের জন্য গড়ে তুলবার পারব এক উন্নতর ভবিষ্যত। মি. ভাইস প্রেসিডেন্ট, এটা আমাদের জন্য খুবই বিবেচিত হবে, বিগত বছর গুলিতে মিশর বাংলাদেশের সম্পর্কের কমিউনিটি গড়েছে। বন্ধু সহযোগিতায় এই বন্ধন আগামী দিনগুলিতে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর, হবে। বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণের জন্য আপনার অত্যন্ত বন্ধতুপূর্ণ গভীর আগ্রহের আমরা প্রশংসা না করে পারি না।

স্বাধীনতার পর থেকে আমরা যে, আপনারা যে অহানুভূতি সহায়তা আপনারা দেখিয়েছেন, তারজন্য আমরা  গভীরভে  কৃতজ্ঞ ।মহাত্মনবৃন্দ ,  প্রেসিডেন্ট, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন মিশরের কোটি জনগণের অত্যন্ত উন্নতি, সুখ-সমৃদ্ধি ও মিশরের-বাংলাদেশের চিরস্থায়ী বন্ধুত্ব কামনা করে আমি আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেবার চাই। খোদা হাফেজ ।

 

Bangabandhu Gurukul

 

আরও পরুন :