২৮ জুন ১৯৭৪ সাল বঙ্গবন্ধুর সম্মানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত ভোজ সভায়ঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, উপস্থিত ভদ্রমন্ডলী ও ভদ্রমহিলাগণ, সুধীবৃন্দ, আপনি আমাকে, আমার সহকমীদের এই নৈশভোজে দাওয়াত করেছেন, তার জন্য আপনাকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনার কিছু উর্দূ, কিছু ইংরাজী বক্তৃতা শুনে সত্যিই আমরা আনন্দিত হয়েছি। আমি আরো অবিভূত হতাম যদি আপনি হিন্দি, বেলুচি ও পশতু ভাষায় বক্তিতা করিতেন এবং এ সমস্ত ভাষায় আপনি বক্তিতা করতে জানেন।
২৮ জুন ১৯৭৪ সাল বঙ্গবন্ধুর সম্মানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত ভোজ সভায়
ভাষা জানা এক জিনিস আর নিজের ভাষাকে ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা করা অন্য জিনিস। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের নানা অসুবিধা থাকা সত্বেও আমরা চেষ্টা করেছি আপনাদের সাদর অভ্যর্থনা জানাতে বাংলাদেশের এই স্বাধীন মাটিতে । আপনি আমাদের নীতি জানেন যে, আমরা সকলের সাথে বন্ধুত্ কামনা করি, তেমনি পাকিস্তানের সরকার ও জনগণের সঙ্গে বন্ধুতু কামনা করি। রর একথা সত্য ইতিহাস, যে ইতিহাস সত্য- তা সত্য হিসাবেই থাকে। এর অন্য ব্যাখ্যা সেই ইতিহাসকে নষ্ট করা যায় না।
আমরা, আপনি জানেন যে, যদিও বাংলাদেশের মানুষের মনে অনেক ব্যাথা, অনেক দুঃখ, অনেক যন্ত্রণা, অনেক কিছু রয়েছে, তবুও আমরা বিশ্বাস করি যে, পুরানা কথা ভুলে যেয়ে নতুন করে আমাদের সম্বন্ধ স্থির করতে বাংলার জনগণ, বাংলার সরকার, কোনদিন পিছপা হয় নাই, ভবিষ্যতেও থাকিবে না। জনাব প্রধানমন্ত্রী, আমাদের আপনার সঙ্গে, আমার ব্যক্তিগতভাবে এবং অন্যান্য বিষয়ে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা হয়েছে । আশা করি যদি আমাদের উদ্দেশ্য মহৎ হয়, তাহলে আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্ত কিছুই মীমাংসা করতে পারব । আপনাদের, আপনাকে আর কষ্ট দিতে চাই না, আপনি আমাদের আন্ত রিক অভিনন্দন গ্রহণ করুন এবং আমি সমস্ত অতিথিবৃন্দকে অনুরোধ করব
যে প্রধানমন্ত্রী জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টোর স্বাস্থ্য, দীর্ঘজীবন, পাকিস্তানের জনসাধারণের সুখ-সমৃদ্ধি এবং যাতে দুনিয়ার মানুষ শান্তিতে বাস করতে পারে এবং দুনিয়ার দুঃখী মানুষ যেন অত্যাচার-অবিচার থেকে রক্ষা পেতে পারে তারই জন্য আমি আজ আপনাদের আবেদন জানাব যে আসুন, আমরা সকলে মিলে, দুনিয়ার দুঃখী মানুষের জন্য, তাদের মঙ্গলের জন্য, বিশেষ করে আমাদের অতিথি প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ জীবন কামনা করে এবং পাকিস্তানের জনগণের সুখ-সমৃদ্ধ কামনা করে, আমি আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।